জলবায়ু ন্যায্যতা বলতে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণে সমতা ও মানবাধিকারের অগ্রাধিকার দেওয়াকে বোঝায়। উন্নত দেশগুলো ব্যাপক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন এবং শিল্পায়নের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। তবে, দরিদ্র দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান ভুক্তভোগী, যদিও তারা এই সমস্যায় ন্যূনতম অবদান রাখে।
সুতরাং, উন্নত দেশগুলোকে একটি জলবায়ু তহবিল প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং দরিদ্র দেশগুলো যাতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে সেজন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে হবে। পাশাপাশি টেকসই কর্মসংস্থান ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
দরিদ্র দেশের জাস্ট ট্রানজিশন বাস্তবায়নের দায়িত্ব ধনী দেশগুলোর উপর বর্তায়। খেয়াল রাখতে হবে যেন দরিদ্র দেশের ক্ষতিগ্রস্থ সম্প্রদায়গুলো পিছনে না পড়ে থাকে। ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র দেশগুলোর জলবায়ু ন্যায়বিচারের বিভিন্ন মাত্রা রয়েছে, যার মধ্যে কাঠামোগত বৈষম্য, আর্থ-সামাজিক বৈষম্য এবং আন্তঃপ্রজন্মগত বৈষম্য অন্তর্ভুক্ত।
কাঠামোগত বৈষম্য:
একটি দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন জাতি, জাতিসত্ত্বা, লিঙ্গ এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থানের মানুষের মধ্যে অসম প্রভাব ও বৈষম্য সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে নারীরা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কারণ পুরুষের তুলনায় তাদের সম্পদের মালিকানা নেই। তদ্রূপ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা জলবায়ু-সম্পর্কিত হুমকির কারণে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। আদিবাসী জনগণও তাদের ঐতিহ্যগত জ্ঞান এবং জীবনযাত্রার উপর ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছেন। তাছাড়া, উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা এবং জীবিকা হুমকির মুখে রয়েছে।
আর্থ-সামাজিক বৈষম্য
যখন একটি দরিদ্র দেশ জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতির সম্মুখীন হয়, তখন সেই দেশের আর্থ-সামাজিক বৈষম্য আরো প্রকট হয়ে উঠে। বৈশ্বকভাবে উন্নত দেশগুলো গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখলেও পরিবেশের ন্যায্যতায় খুব সামান্য খরচ বহন করে।
আন্তঃপ্রজন্মগত বৈষম্য
পূর্ববর্তী প্রজন্মের নেতিবাচক সিদ্ধান্তের পরিণতি যখন বর্তমান প্রজন্মের শিশু ও তরুণরা ভোগ করে, তখন আন্তঃপ্রজন্মগত বৈষম্য সৃষ্টি হয়। তরুণ প্রজন্ম এই সংকটে ন্যূনতম অবদান রেখে তাদের জীবদ্দশায় এর চরম প্রভাব সহ্য করে। তাই জলবায়ু-সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণ করার সময় পরবর্তী প্রজন্মের এবং তাদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় অগ্রাধিকার দিতে হবে।