Skip to content

Just Transition Bangladesh

ন্যায়সঙ্গত বিশ্বের জন্য একটি আদর্শ অর্থনৈতিক মডেল

বর্তমান অর্থনীতিতে আমরা যে উপায়ে পণ্য উৎপাদন এবং ব্যবহার করি তা টেকসই নয়। আমরা একটি প্রচলিত, লিনিয়ার/রৈখিক অর্থনৈতিক মডেলে অভ্যস্ত, যা মূলত প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ-উৎপাদন-ব্যবহার-ফেলে দেওয়ার প্রক্রিয়া চর্চা করে।

এই প্রক্রিয়াটি প্রকৃতি থেকে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের উপর নির্ভরশীল। প্রচলিত মডেলে পণ্যগুলো স্বল্পকালীন ব্যবহারের জন্য ডিজাইন করা হয়, যা ভোক্তাদের পুনরায় সেই পণ্য কেনার প্রবণতা তৈরি করে।  ফলে পরিকল্পিত অবক্ষয় ঘটে। 

এর ফলে, আমরা প্রকৃতি থেকে প্রচুর কাঁচামাল আহরণ করি এবং পরিবেশে প্রচুর পরিমাণ বর্জ্য উৎপন্ন করি। এই বর্জ্য শুধুমাত্র প্রকৃতির ভারসাম্যকে ব্যাহত করে না, বরং আমাদের জীবনকেও প্রভাবিত করে।

চক্রাকার অর্থনীতি এমন একটি অর্থনৈতিক মডেল যা আমাদের পণ্য তৈরি এবং ব্যবহারের প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে বর্জ্য হ্রাস এবং সম্পদের সর্বাধিক ব্যবহারের দিকে লক্ষ্য রাখে। রিসাইকেলিং, পুনঃব্যবহার, এবং মেরামতের মাধ্যমে এটি পণ্য এবং উপকরণগুলো যতদিন সম্ভব ব্যবহার করার উপর গুরুত্ব দেয়। এর ফলে কাঁচামাল এবং কম শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশগত চাপ হ্রাস পায়। এছাড়া, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত দিকগুলো বিবেচনা করে টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখে। মূলত, এটি প্রকৃতিকে রক্ষা করার উদ্যোগ, যা কিনা প্রাকৃতিক চক্রকে অনুসরণ করে এবং সম্পদের সদ্ব্যবহারের উপর জোর দেয়।

সুতরাং আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে চক্রাকার অর্থনীতি চর্চা করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। মানুষ হিসেবে, আমাদের সকলের চক্রাকার অর্থনীতি অর্জনের লক্ষ্যে কিছু দায়িত্ব রয়েছে। ব্যক্তিগত অভ্যাস এবং জীবনযাত্রা পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা চক্রাকার অর্থনীতি অর্জন করতে পারি। তাই, ব্যক্তিগত জীবনে টেকসই ভোগের অভ্যাস গ্রহণ করলে কার্বন হ্রাস এবং শক্তি সংরক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। চক্রাকার অর্থনীতির চর্চা এবং সামাজিক পর্যায়ে এর নীতিগুলিকে প্রচার করার জন্য কমিউনিটি ভিত্তিক প্রোগ্রাম বা উদ্যোগের প্রয়োজন রয়েছে। তাছাড়া, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে টেকসই উন্নয়ন এবং পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহারে প্রচার-প্রচারণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

দায়িত্বশীল উৎপাদন

চক্রাকার অর্থনীতি অর্জনের লক্ষ্যে দায়িত্বশীল উৎপাদন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সর্বাধিক মুনাফার দিকে নজর দেওয়ার পাশাপাশি, আমাদের অবশ্যই পণ্যগুলিকে আরও টেকসই করার জন্য ডিজাইন করতে হবে, যা সহজে পুনর্ব্যবহারযোগ্য হবে এবং প্রকৃতির কোনপ্রকার ক্ষতিসাধন করবে না। একটি চক্রাকার অর্থনীতি অর্জনের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিকল্পনা এবং নীতিমালা তৈরি করা প্রয়োজন।

নতুন পণ্যের ব্যবহার কমানো

নতুন পণ্যের ব্যবহার কমানো বলতে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য ব্যবহারে সচেতন হবার কথা বলা হয়েছে। আমাদের আরও দায়িত্বশীলভাবে পণ্য ক্রয়ের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। কোন পণ্য ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়, আমাদের নিশ্চিত হতে হবে যে, এটি আমাদের সত্যিই প্রয়োজন কিনা। 

অধিকন্তু যদি আমাদের কোন পণ্য ক্রয়ের প্রয়োজন হয়, তবে এমন একটি পণ্য বেছে নেয়া উচিৎ যা কিনা পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই। উক্ত পণ্যটি ক্রয়ের ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই জানা জরুরি পণ্যটি কীভাবে তৈরি হয়েছে এবং এটি নিরাপদে নিষ্পত্তি করার উপযুক্ত উপায় কী। আমরা যত বেশি পণ্য ক্রয় করব, তত বেশি উৎপাদন করতে হবে এবং তত বেশি পৃথিবী থেকে কাঁচামাল আহরণ করতে হবে। একজন ব্যক্তির প্রচেষ্টা ক্ষুদ্র বলে মনে হতে পারে, তবে যদি আমরা এটি একটি দার্শনিক চর্চা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করি, তবে এর প্রভাব বিশাল।

পুনঃব্যবহার

পুনঃব্যবহার অর্থ একই পণ্য বারংবার ব্যবহার করা।পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রয়োজনীয় পণ্য থাকা সত্ত্বেও আমরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন পণ্য কিনতে অভ্যস্ত। আমাদের উচিত যে পণ্যগুলো আমাদের কাছে রয়েছে সেগুলি সঠিকভাবে ব্যবহার করা এবং প্রয়োজনে সেগুলি মেরামত করা। পুরানো কাপড় ফেলে দেওয়ার পরিবর্তে, আমরা সেগুলি আমাদের ছোট ভাই-বোনদের দিতে পারি। কেনাকাটা কিংবা বাজারের ক্ষেত্রে প্রতিবার দোকান থেকে নতুন ব্যাগ নেয়ার পরিবর্তে, আমরা একই শপিং ব্যাগ প্রতিবার ব্যবহার করতে পারি। 

যদি কোন পণ্য তার মূল উদ্দেশ্যে আর ব্যবহার করা না যায়, তবে আমরা এটি অন্যভাবে ব্যবহার করার উপায় খুঁজে বের করতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, পুরানো বালতিগুলিকে ফুলের টব হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। যখন আমরা একটি পণ্যের ব্যবহার শেষ করি, তখন আমরা বিবেচনা করতে পারি যে অন্য কারও এটি প্রয়োজন হতে পারে। আমরা আমাদের ব্যবহৃত পণ্যগুলি অনলাইনে বিক্রিও করতে পারি।

রিসাইকেলিং

রিসাইকেলিং অর্থ বর্জ্য উপকরণকে নতুন উপকরণ এবং আইটেমে রূপান্তর করা। যখন কোন পণ্য আর ব্যবহারোপযোগী থাকে না, তখন আমাদের অবশ্যই এটি রিসাইকেল করতে হবে। আমাদের শুকনো বর্জ্য এবং ভেজা বর্জ্যের জন্য পৃথক পৃথক ঝুড়ি/ বাস্কেট থাকা জরুরি। কোন পণ্যটি কোন উপাদান দিয়ে তৈরি তা জানা জরুরি যেন আমরা সেগুলো রিসাইকেলের জন্য দিতে পারি।

দায়িত্বশীল নিষ্কাশন

পণ্য এবং উপকরণের ব্যবহার উচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। এই ব্যবহারের সাথে বর্জ্যের অবশ্যম্ভাবী উৎপাদন ঘটে, যা আমাদের পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। আমরা আমাদের ব্যবহৃত পণ্য বা উপকরণগুলোকে প্রকৃতিতে ফেলে দিতে পারি না। বরং, আমরা যে পণ্যগুলো ব্যবহার করি, সেগুলির প্রতিটির দায়িত্বশীল নিষ্পত্তির জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা এবং কৌশলগুলি তৈরি করার প্রয়োজন রয়েছে। বর্জ্য সংগ্রহ, বাছাই, রিসাইকেল এবং নিষ্পত্তির সুবিধার্থে পর্যাপ্ত অবকাঠামো অপরিহার্য। সরকার এবং পৌরসভাগুলো অবশ্যই আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সুবিধা, যার মধ্যে রিসাইকেল কেন্দ্র, কম্পোস্টিং সুবিধা, এবং বিপজ্জনক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, তাতে বিনিয়োগ করতে হবে যাতে বর্জ্যগুলো দক্ষতার সাথে এবং দায়িত্বশীলভাবে পরিচালনা করা যায়।

কেন আমাদের চক্রাকার অর্থনীতির প্রয়োজন?

 বর্তমান বিশ্ব অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, যেমন: বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, পরিবেশ দূষণ, অটোমেশন এবং কর্মসংস্থান হ্রাস। একটি চক্রাকার অর্থনৈতিক মডেল এই সমস্যাগুলির প্রশমনে সাহায্য করতে পারে। তাই যত দ্রুত সম্ভব আমাদের চক্রাকার অর্থনীতির দিকে ধাবিত হওয়া উচিৎ।

চক্রাকার অর্থনীতি টেকসই উন্নয়ন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, পরিবেশগত সংরক্ষণ, সামাজিক সমতা, এবং জাস্ট ট্রানজিশকে প্রচার করে। উৎপাদন, ভোগ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চর্চার ন্যায়সঙ্গত অর্থনীতি গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুফল বয়ে আনবে।

সম্পদ সংরক্ষণ

বিশ্বের জনসংখ্যা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর সাথে সাথে কাঁচামালের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু, কাঁচামালের সরবরাহ সীমিত। একটি সার্কুলার অর্থনীতিতে, পৃথিবীর সম্পদ সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহৃত হয়।

বর্জ্য হ্রাস

দীর্ঘস্থায়ী পণ্যগুলির দিকে পরিবর্তন আনলে, যেগুলি পুনঃব্যবহারযোগ্য, আপগ্রেডযোগ্য এবং মেরামতযোগ্য, তা বর্জ্য পরিমাণ কমাতে সাহায্য করবে। একটি সার্কুলার অর্থনীতি বর্জ্য উৎপাদন রোধ করার লক্ষ্য রাখে, ফলে পরিবেশ দূষণ এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস পায়।

আর্থিক অগ্রগতি

একটি সার্কুলার অর্থনীতি পণ্যের ডিজাইন এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনায় উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে, যা নতুন বাজার এবং চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করে।

পরিবেশ সংরক্ষণ

একটি সার্কুলার অর্থনীতি পরিবেশগত ক্ষতি কমায়, দূষণ হ্রাস করে এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে।

একটি সার্কুলার অর্থনীতি পরিবেশগত ক্ষতি হ্রাস করে, দূষণ কমায় এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে।

সার্কুলার অর্থনীতির আরেকটি উপকারিতা হলো মোট বার্ষিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস।

Scroll to Top